ভারতে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ভয়াল রূপ প্রকাশ করলো ‘ক্যারাভান’
লিখেছেন লিখেছেন এমএ হাসান ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৪:৫৮:১৮ বিকাল
জাতীয়তাবাদের আড়ালে ভয়ঙ্কর এক হিন্দু
সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদের
ধারা চর্চা করছে ভারতের কয়েকটি সাম্প্রদায়িক
সংগঠন। এই সংগঠনগুলো হিন্দু ধর্মভিত্তিক
রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে শত শত
মানুষ হত্যা করেছে। এমনই
কয়েকটি হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের
পেছনে কাজ করেছেন ভারতের সাম্প্রদায়িক
নেতা স্বামী অসীমানন্দ। সম্প্রতি ‘ক্যারাভান’
নামের একটি সাময়িকীর
একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়
কিভাবে স্বামী অসীমানন্দের নেতৃত্বে ভারত
রাষ্ট্রের ভেতরে দিনকে দিন বেড়ে উঠেছে হিন্দু
চরমপন্থার এই ভয়ঙ্কর ধারা।
রামকৃষ্ণ মিশন ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ
(আরএসএস) নামের একটি সংগঠন
ভারতে হিন্দুদের সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের
নেতৃত্ব দিচ্ছে। স্বামী অসীমানন্দ এই
দুটো সংগঠনের আশ্রয় প্রশ্রয়ের মধ্য দিয়েই
একজন খুনী হয়ে উঠেছেন। ক্যারাভানে প্রকাশিত
স্বামী অসীমানন্দের জীবন থেকে স্পষ্ট
হয়ে উঠেছে স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিষ্ঠিত
ধর্ম নিরপেক্ষ ‘রামকৃষ্ণ মিশন’
কিভাবে একটি সাম্প্রদায়িক ও
সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে পরিণত হওয়ার চিত্র। এই
নিয়ে নতুনদিনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম
পর্ব প্রকাশিত হলো আজ।
‘যত মত, তত পথ’ মূলমন্ত্র নিয়ে যাত্রা শুরু
করলেও ক্রমে ক্রমে নানান মতের প্রতি সম্মান
দেখানর চর্চা থেকে সরে এসেছে রামকৃষ্ণ মিশন।
এ
প্রসঙ্গে ক্যারাভানকে দেওয়া সাক্ষাতকারে স্বামী অসীমানন্দ
বলেন, প্রথমে মনে করতাম আমাদেরকে যেমন
পূজা করতে হবে তেমনি ঈদও উদযাপন
করতে হবে। কিন্তু এক পর্যায়ে রামকৃষ্ণ মিশনের
কয়েকজন তাত্ত্বিক বলতে শুরু করলেন যে,
স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষাকে বিকৃত
করে ফেলা হয়েছে। আসলে শতমত শত পথ নয়,
হিন্দুত্ববাদকেই একমাত্র মত ও পথ হিসেবেই
দেখিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।
আমি প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লেও পরে এই
কথাটি মেনে নেই। কেননা, স্বামী বিবেকানন্দ
আসলে আমাদের কি শেখাতে চেয়েছেন
তা নিয়ে ব্যখ্যা বিশ্লেষণ করার
মতো যোগ্যতা আমার নাই’। এই অনুভূতির
পরই বদলে যান স্বামী অসীমানন্দ।
স্বামী অসীমানন্দ রামকৃষ্ণ মিশনের প্রচার
করা ‘হিন্দুত্বই একমাত্র মত ও পথ’
এবং আরএসএসের
সন্ত্রাসবাদী পন্থা একসাথে মিশিয়ে হয়ে উঠেন
আধুনিক ভারতে সাম্প্রদায়িকতা ও
সন্ত্রাসবাদের নেতা। শুরুর দিকেই তিনি নিজের
সমস্ত সাংগঠনিক শক্তি প্রয়োগ করেন
ভারতে খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার বন্ধ করার
কাজে। এই মিশনে তিনি সফলও হন। অন্য
যেকোন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের মতো করেই
স্বামী অসীমানন্দও প্রচার ও সংগঠন
গড়ে তোলার জন্য বেছে নেনে ভারতের বঞ্চিত
ও শোষিত মানুষদেরকে।
ক্যারাভানকে দেওয়া সাক্ষাতকারে স্বামী অসীমানন্দ
সমসাময়িক ভারতের হিন্দু
সাম্প্রদায়িকতা বিকাশের
সবচেয়ে ভালো দৃষ্টান্ত হিসেবে অন্দামান ও
নিকোবর দীপপুঞ্জে তার কার্যক্রমের কথাআ
উল্লেখ করেন। ভারতের মূল ভূখন্ড
থেকে বিতাড়িত ও বঞ্চিত মানুষরাই মূলত
আন্দামান দীপপুঞ্জে বসবাসের জন্য যেতেন।
আর সেখানে খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রভাবের
কারণে তারা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতেন।
স্বামী অসীমানন্দ আন্দামানে চলে যান
হিন্দুত্ববাদের বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য।
তিনি সেখানে গিয়ে হুমকি ও সন্ত্রাসের
মাধ্যমে আন্দামানে বসবাসকারী ভারতীয়দের
হিন্দু ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করতে থাকেন।
স্বামী অসীমানন্দ আন্দামান
দ্বীপে নারী প্রচার কর্মীর একটি দল গঠন
করেন। তাদের কাজ ছিল আন্দামানের
বসবাসকারীদের হিন্দু ধর্মের নানান
রীতিনীতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া। এই কৌশল
কাজে লাগিয়ে হাতেনাতে সফলতা পেতে শুরু
করেন স্বামী অসীমানন্দ। এই কৌশল ব্যবহার
করে স্বামী অসীমানন্দ গত শতকের নব্বইয়ের
দশক পর্যন্ত হিন্দু জাতীয়তাবাদের আদর্শ
প্রচার করতে থাকেন। এরই ফল
হিসেবে আন্দামান থেকে প্রথমবারের
মতো বিজেপির প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত
হয়। এইভাবে ভারতের গুজরাটসহ অন্যান্য
স্থানগুলোতে হিন্দু জাতীয়তাবাদ ও
সাম্প্রদায়িক ভাবনার বিস্তার ঘটিয়েছেন
স্বামী অসীমানন্দ। স্বামী অসীমানন্দের এই
সফলতার কারণেই তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির
দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়া, ভারত সরকারকেও
হিন্দু জাতীয়তাবাদ বিকাশে সহায়তা করতে বাধ্য
করান।
স্বামী অসীমানন্দ বর্তমানে একাধিক
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও খুনের মামলায়
বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এর
মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ২০০৭ সালে ভারত ও
পাকিস্তানের
মধ্যে চলাচলকারী সমঝোতা এক্সপ্রেসে বোমা হামলার
বিচার। ওই হামলায় কমপক্ষে পঞ্চাশ জন মানুষ
মারা গিয়েছিলেন। এছাড়া, ২০০৭
সালে হায়দ্রাবাদের
মক্কা মসজিদে বোমা হামলায় ১১জনকে হত্যা,
একই সালে আজমীর শরীফে বোমা হমলাও
তিনজনকে হত্যার বিচার।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সত্য তার আপন মহিমায় প্রকাশিত হয়-ই
তবে যদি সেভেন সিস্টার থেকে দু এক বোন করতে পারে সে জন্য আর্শীবাদ থাকবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন